কাশ্মিরে পর্যটকদের উপর হামলা উদ্বেগজনক
২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০২ এএম

ভারত অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মিরের জনপ্রিয় পর্যটন স্পট পেহেলগাঁও এলাকায় একটি পর্যটকদলের উপর বন্দুক হামলায় অন্তত ২৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এমন সময় এই ঘটনা ঘটল, যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সউদি আরব সফরে ছিলেন এবং মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ভান্স ভারত সফর করছিলেন। ঘটনার পর নরেন্দ্র মোদি সউদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে দিল্লিতে ফিরে আসেন। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ঘটনা প্রবাহে ভারত যখন এক কঠিন সন্ধিক্ষণ পার করছে, তখন কাশ্মিরে হামলায় বেসামরিক লোক হতাহতের ঘটনা সেখানে একটি নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্ম হতে চলেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঠিক একই ধরণের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ২০১৯ সালের কাশ্মির উপত্যকার পুলওয়ামায় সেনাবাহী ট্রাকে আরডিএক্স বিষ্ফোরণে ৪০ জনের বেশি সেনাসদস্য নিহত হয়েছিল। সে ঘটনার দায় পাকিস্তানের উপর চাপিয়ে ভারতীয় বিমান বাহিনী পাকিস্তানের বালাকোটে কথিত সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেছিল। এসব নিয়ে তখন অনেক নাটকীয়তা ও ব্লেইমগেম দেখা গেছে। ভারতের অভ্যন্তরেও এ নিয়ে সরকারবিরোধীরা সমালোচনায় সরব হয়েছিল। কাশ্মিরের তৎকালীন রাজ্যপাল বিজেপি নেতা সত্যপাল মালিক পুলওয়ামা ঘটনার জন্য সরকারের ভুল সিদ্ধান্তকে দায়ী করে প্রকাশ্যে বিবৃতি দিলে মোদি ও অজিত দোভালরা তাকে মুখ বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে পুলওয়ামা ঘটনা সে সময়ে চলমান লোকসভা নির্বাচনের প্রচারণায় পাকিস্তান ও মুসলিম বিদ্বেষ ছড়িয়ে হিন্দুত্ববাদী ন্যারেটিভ প্রচার করে ভোটের ফায়দা হাসিলের চেষ্টায় অনেকটা সফলও হয়েছিল বিজেপি।
পেহেলগাঁওয়ে বৈসারণ উপত্যকায় বেসামরিক নাগরিকদের উপর বন্দুক হামলার ঘটনা দু:খজনক। হিন্দুত্ববাদী ভারত সরকার বিষয়টিকে যেভাবেই ব্যাখ্যা করুন, কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠি বা স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠি এ হামলার সাথে জড়িত থাকলে তা কোনো লক্ষ্য অর্জন করবে না। নিরস্ত্র বেসামরিক লোকদের উপর এ ধরণের হামলা সাধারণ কাশ্মিরিরা সমর্থন করবে না। পাকিস্তানভিত্তিক আরওয়াই নিউজের এক খবরে বলা হয়, পেহেলগাওয়ে বন্দুক হামলায় পর্যটক হত্যার ঘটনায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় গভীর উদ্বেগ ও সমবেদনা প্রকাশ করেছে। কাশ্মিরের নির্বাচিত মূখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহও এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও দু:খ প্রকাশ করেছেন বলে জানা যায়। পেহেলগাও হত্যাকান্ডকে ফল্স ফ্ল্যাগ বা উদ্দেশ্যমূলক সাজানো ঘটনা কিনা এমন আলোচনাও উঠে এসেছে পাকিস্তানের গণমাধ্যমে। কিছুদিন আগে কাশ্মির নিয়ে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিফ মুনিরের একটি বক্তব্যের চরম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল ভারত। পেহেলগাও বন্দুক হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নরেন্দ্র মোদিকে ফোন করে সন্ত্রাস মোকাবেলায় ভারতের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন বলে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়। ভারতে ওয়াক্ফ আইন সংশোধনের জেরে উত্তপ্ত সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি এবং ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় চীন-পাকিস্তানের সামরিক ও কৌশলগত মেরুকরণের প্রেক্ষাপটে পেহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাকে বিজেপির মুসলিম বিদ্বেষী তৎপরতা জোরদারে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয় কিনা তাই এখন দেখার বিষয়। ইতিমধ্যে টিআরএফ( দ্য রেজিসট্যান্স ফ্রন্ট) নামের একটি কাশ্মিরি সংগঠন পেহেলগাও বন্দুক হামলার দায় স্বীকার করেছে বলে জানা যায়। এ সংগঠনটিকে এলইটি বা লস্কর-ই তৈয়েবার সহযোগী বলে বর্ননা করে থাকে ভারতীয় গোয়েন্দা ও গণমাধ্যমগুলো।
পুলওয়ামা বিষ্ফোরণের পর ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদ করে কাশ্মিরের স্বায়ত্বশাসন ও বিশেষ মর্যাদা ক্ষুণœ করে সেখানে কেন্দ্রীয় শাসন জারি করা হয়। বৃটিশ ঔপনিবেশিক আমল পর্যন্ত কাশ্মির উপত্যকা শত শত বছর ধরে স্বাধীন সত্তা হিসেবে টিকে ছিল। ভৌগলিক ও ঐতিহাসিকভাবে কাশ্মির কখনোই ভারতের অংশ ছিল না। প্রায় সাড়ে ৭ দশক ধরে কাশ্মিরের উপর ভারতীয় জবরদখল চলছে। যা কাশ্মিরের মুসলমানরা মেনে নেয়নি। তারা কখনোই ভারতীয় ন্যারেটিভ মেনে নেয়নি, মেনে নেবে না। এই মুহূর্তে কাশ্মির উপত্যকায় ৫ লক্ষাধিক ভারতীয় সৈন্য এবং কয়েক লাখ প্যারা মিলিটারি ফোর্স মোতায়েন করে জম্মু ও কাশ্মির উপত্যকাকে একটি গ্যারিসন ও যুদ্ধক্ষেত্রে পরিনত করা হয়েছে। ভারতের হিন্দুত্ববাদী মুসলিম বিদ্বেষ একটি সিস্টেমেটিক জেনোসাইডে পরিনত হয়েছে। সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ ধারা পরিবর্তন এবং একের পর এক নতুন নতুন আইন করে মুসলমানদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিনত করা হচ্ছে। সর্বশেষ ওয়াকফ আইন পাস করে ভারতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা উস্কে দেয়া হয়েছে। বুলডোজার দিয়ে মসজিদ, মাদরাসাসহ মুসলমানদের বাড়িঘর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে পেহেলগাও বন্দুক হামলার ঘটনার দায় মুসলমান জঙ্গি এবং পাকিস্তানের উপর চাপিয়ে পরিস্থিতিকে আরো উত্তপ্ত করে তোলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, রাজনৈতিক ক্ষমতা কিংবা অস্ত্র দিয়ে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। কোনো সমস্যাই সমাধানের ঊর্ধ্বে নয়। পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও তালেবানদের সাথে আলোচনা ও সমঝোতার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে। বিবদমান হামাস-হিজবুল্লাহর সাথে ইসরাইলকে সমঝোতা ও যুদ্ধবিরতির আলোচনায় বসতে হচ্ছে। যুদ্ধরত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সাথেও ক্রেমলিনকে আলোচনা ও যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে দেখা যাচ্ছে। অস্ত্র দিয়ে যেমন স্বাধীনতাকামিদের দাবিয়ে রাখা যায় না, একইভাবে বিচ্ছিন্ন হামলা ও জঙ্গিবাদী সহিংসতার মাধ্যমে অধিকার আদায়ের নজির নেই। বৃহত্তর জনগোষ্ঠির শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার স্বার্থেই সব পক্ষকে আলোচনায় বসে একটি রাজনৈতিক সমাধানে আসতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

নির্ধারিত সময়ের ২ মাস পূর্বে সকল দেনা পরিশোধ করল পেট্রোবাংলা

নানা কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে হিলি স্থলবন্দরে পালিত হচ্ছে মহান মে দিবস

এবার পাকিস্তানের বিমানের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করল ভারত

মহান মে দিবস : রাজধানীতে বাদ্যযন্ত্রের তালে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা

আজ মহান মে দিবস

সেমিফাইনালে হেরে মেসির মায়ামির বিদায়

ইবিতে পেশাগত দায়িত্ব পালনে সাংবাদিককে বাধা দিলো সহ-সমন্বয়করা

মানিকগঞ্জে আ.লীগ নেতা ও সাবেক পৌর কাউন্সিলর উজ্জ্বল হোসেনে গ্রেফতার

পেকুয়ায় একদিনে কুকুরের কামড়ে শিশুসহ আহত- ২০

ছয় গোলের রোমাঞ্চ শেষে বার্সা-ইন্টার

চেন্নাইয়কে বিদায় করে শীর্ষ দুইয়ে পাঞ্জাব

সেমিফাইনালে হেরে আল নাসেরের বিদায়

দুদকের মামলা : আমানউল্লাহ আমান ও তার স্ত্রীর দন্ডাদেশ বাতিল

অন্তর্বর্তী সরকারের ভুল সিদ্ধান্তে অর্থনীতি আরো সঙ্কটে পড়েছে : রিজভী

বাংলাদেশ-মিয়ানমার একমত হলে করিডোর চালু করতে পারে জাতিসংঘ

কলকাতায় হোটেলে আগুন নিহত ১৪

ইউক্রেন খুব শিগগিরই ‘ধ্বংস’ হবে: ট্রাম্প

টঙ্গীতে বকেয়া বেতনের দাবিতে মহাসড়কে অবরোধ

প্রশ্ন : ঈদের বাজারে জীনদের বাজার করা প্রসঙ্গে।

ভ্যান চালক হত্যাচেষ্টা: অভিনেতা সিদ্দিকের ৭ দিনের রিমান্ডে